আপনি যদি ট্রেডিং জগতে পুরাতন হন, তবে একটি বিষয় খেয়াল করেছেন কি? আর তা হচ্ছে যে, সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ আর ডিসেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ এর বিষয়টি! আমি কিন্তু এই ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে আসার পরে; এই প্রথম শুনতে শুরু করেছি। আমার মতো যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে এসে এই শব্দ দুইটি শুনতে শুরু করেছেন আজ তাদের জন্যই এই টপিক। তো চলুন জেনে নেই সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর সম্পর্কে কিছু কথা।

সেন্ট্রালাইজ ও ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ

সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর পার্থক্য জানার পূর্বে, চলুন আমরা জেনে নেই সেন্ট্রলাইজ ও ডিসেন্ট্রালাইজ এর অর্থ। সেন্ট্রালাইজ ও ডিসেন্ট্রালাইজ দুইটি ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ দাড়াই কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ।

সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ

যে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ এককেন্দ্রীক তাকে সেন্ট্রলাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ বলা হয়। আর যে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ বহুকেন্দ্রীক বা নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্র ভিত্তিক নই তাকে ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ বলা হয়। তারপরও বুঝতে সমস্যা হলে কোন সমস্যা নাই, কারণ বিস্তারিত আলোচনা সামনে রয়েছে। আর বিস্তারিত আলোচনা থেকে আশা করি পরিস্কার হয়ে যাবেন।

কি কারণে এর উৎপত্তি?

আপনার যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং এর পূর্বে অন্য কোথাও ট্রেড করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তবে বিষয়টি খুব সহজেই ধরতে পারবেন। আমার জানা মতে, বিশেষ করে আপনি সেন্ট্রালাইজ আর ডিসেন্ট্রালাইজ এই দুইটি শব্দ অন্য কোন ট্রেডিং মার্কেটে শুনে থাকবেন না। কারন ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যতিত অন্যান্য ট্রেডিং জগতে মাত্র একটি মার্কেটই পাবেন, আর তা হচ্ছে সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ। অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটই এক মাত্র মার্কেট যার ফলে এই শব্দ দুইটির উৎপত্তি।

এখন বলতে পারেন কি কারণে এর উৎপত্তি? সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর উৎপত্তি হওয়ার মূল কারন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন নিজেই। বিটকয়েন এই জন্যই তৈরি করা হয়েছে যাতে কারেন্সির উপর একক কোন নিয়ন্ত্রন না থাকে। বিষয়টি আরেকটু পরিস্কার হওয়ার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কিভাবে এর উত্তপত্তি? আরটিকেলটি পড়তে পারেন।

এছাড়া সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর উৎপত্তির আরেকটি কারন হচ্ছে ইউজার সেফটি। সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জে আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাধা থেকে যান। কিন্তু ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জে আপনি থাকেন স্বাধীন ট্রেডার (বিস্তারিত আলোচনা সামনে)।

সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর পার্থক্য

আমরা শুরুতেই সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ এবং ডিসেন্ট্রালাইজ এই দুইটি শব্দের ধারনা পেয়েছি। সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর পার্থক্য বুঝতে হলে এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ জানা প্রয়োজন। এখন চলুন কিছু উদাহরন সহ এর সুবিধা-অসুবিধা গুলো পরিস্কার হওয়া যাক।

সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জের সুবিধা

শুরুতেই জেনেছি যে, সেন্ট্রালাইজ এর অর্থ কেন্দ্রীকরণ। আমি যখন থেকে অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকেই যতগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সির এক্সচেন্জ সাইট দেখেছি তার সবই ছিলো সেন্ট্রালাইজ। একমাত্র EtherDelta ছাড়া ডিসেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ ছিলো না, যা বর্তমানে ForkDelta https://forkdelta.app/ । সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর সুবিধা নিয়ে বলতে গেলে ঠিক তেমন উল্লেক্ষ করা মতো কিছু নেই। বরং অসুবিধাটাই হয়তো একটু বেশি মনে হয়।

যাইহোক, আপনি হয়তো বিন্যান্স (Binance) ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ এর নাম শুনে থাকবেন। বর্তমানে বিন্যান্স একটি টপ সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইট। বিন্যান্সে ট্রেড করার জন্য অন্যান্য ওয়েবে সাইটের মত এখানেও ইমেল পাসওর্য়াড ব্যবহার করে একাউন্ট ওপেন করার সুবিধা পাবেন।

কোন সাপোর্টের প্রয়োজন হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান করার সুবিধা পাবেন। এছাড়া আর বাড়তী কোন সুবিধা উল্লেক্ষ করার মত নই।

সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জের অসুবিধা

সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। এইটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার মতের সাথে অন্য কারো মত নাও মিলতে পারে। কারন আমি আমার অভিজ্ঞতার উপর আমি এর সুবিধা অসুবিধা গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যাইহোক, চলুন কিছু উদাহরন দিয়ে আলোচনা করা যাক যে, সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জের অসুবিধা গুলো কি হতে পারে।

মনে করেন, আপনার বিন্যান্স ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটে একটি একাউন্ট আছে। আপনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিন্যান্সে ট্রেড করে আসছেন। আর সেই সাথে কিছু কয়েন সেখানেই হোল্ড করছেন। বেশ ভাল কথা।

আমরা ইমেল ব্যবহার করার জন্য সাধারনত জিমেল, ইয়াহু ইত্যাদি ফ্রি ইমেল সার্ভিস গুলো ব্যবহার করে থাকি। আর সেই সাথে একাধিক। বিষয়টি খুবই রেয়ার হলেও মনে করেন, কোন কারন বসতো আপনার ইমেলটি ডিজেবল হয়ে গেল। এখন ইমেল ডিজেবল হয়ে গেলে আপনি আপনার বিন্যান্সের একাউন্ট থেকে কয়েন উইথড্র দিতে পারবেন না। কারণ, উইথড্র দিতে ইমেল কনফারমেশন করতে হয়।

এখন ইমেল ডিজেবল হওয়ার ফলে আপনাকে ইমেল পরিবর্তন করতে হবে। আর ইমেল পরিবর্তন আপনি নরমাল্লি করতে পারবেন না। কারন ইমেল পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে তাদের সাপোর্টে কন্টাক্ট করতে হবে।

আপনি যখন তাদরে সাথে কন্টাক্ট করে আপনার সমস্যার কথা বলবেন। তখন আপনাকে মালিকানা ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে কিছু প্রশ্ন করা হবে। আর সেই সাথে বেশ কিছু ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে।

প্রশ্ন গুলো ধরন কিছুটা এইরকম। আপনি কবে একাউন্ট খুলেছিলেন? সর্ব শেষ লগিন করেছেন এমন কয়েকটি আইপি। আপনার একাউন্টের বর্তমান ব্যালান্স কত আছে?সর্বশেষ করা কয়েকটি ট্রেডিং হিস্টোরি। সর্বশেষ করা কয়েকটি ডিপোজিট এ্যড্রেস। সর্বশেষ করা কয়েকটি উইথড্র এ্যড্রেস। আপনি যদি 2FA একটিভ করে থাকেনে তবে একটিভ করার তারিখ। আপনার ইমেল ডিজেএবল করেছে তার প্রমান। আর ডকুমেন্ট হিসেবে আপনার ছবি, আইডি কাডের ছবি এবং ভিডিও।

সকল তথ্য সত্য প্রমাণিত হলে আপনার একাউন্ট ফিরে পেতে প্রায় ২০-৩০ দিন বা তারও বেশি সময় লেগে যাবে। বিষয়গুলো আপনার একাউন্টের জন্য প্রয়োজন হলেও অনেক দীর্ঘ একটি সময় লেগে যায়। আর কিছু কিছু তথ্য মনে রাখাও বেশ কঠিন। যেমন ধরুন আপনি কবে একাউন্ট খুলেছেন বা 2FA কবে একটিভ করেছেন। এর মাঝে যদি আপনি কোন একটি ভুল করেন তবে আপনি একাউন্ট ফিরে পাবার সম্ভাবনা হরাবেন চিরতরে। আর তারা যদি আপনাকে একাউন্ট ফেরত নাও দেয় তবুও আপনার করা কিছু নেই। কারন আপনি বাংলাদেশের নাগরিক।

সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ গুলোতে ইউজারের একাউন্ট গুলো পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রনে। যার ফলে আপনার একাউন্টের কয়েনের হেরফেরও তারা চাইলে করতে পারে। যার কারণে যেখানে সেন্ট্রালাইজ vs. ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ এর কথা আসে সেখানে সেন্ট্রালাইজ অনেকটাই ঝামেলা যুক্ত।

সেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ এর আরেকটি ঝামেলা হচ্ছে হ্যাকিং। যেকোন সময় এইসব এক্সচেন্জ গুলো হ্যাকিং এর স্বীকার হতে পারে। যার ফলে আপনিও এর ভুক্তভোগি হতে পারেন। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন হ্যাকিং এর কবলে পড়ে নিউজিল্যান্ডের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ ক্রিপ্টোপিয়া হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে দেওলিয়া হয়ে গেছে। যার ভুক্তভোগি আমি নিজেও। এছাড়া বিন্যান্সও হ্যাকিং এর কবলে পড়েছিলো। যদিও যেসব একাউন্ট এই হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিলো তার পুরোটাই বিন্যান্স কর্তৃপক্ষ রিকভার করে দিয়েছিলো। নিসন্দেহে ইউজার ফ্রেন্ডিলি উদ্যোগ।

সহজ কথাই সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ মানেই কারো কাছে আপনি বন্দি থাকার মতো। তাই বলে আমি কিন্তু একিবারে সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি, তা কিন্তু নই। তবে হ্যাঁ, আসতে আসতে পুরোটাই ডিসেন্ট্রালাইজ এর দিকে মুভ করছি। যেমনটা সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ গুলো করার চেষ্টা করছে (: ।

ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জের সুবিধা

lock-and-key

ডিসেন্ট্রালাইজ মানেই বিকেন্দ্রীকরণ। যার কোন একক কেন্দ্র নেই। তার মানেই এখানে আপনাকে কেউ একক ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। একরকম আপনি মুক্ত। এখন বর্তমানে ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জ গুলো ডিসেন্ট্রালাইজ এর দিকে পা বাড়াচ্ছে। যেমন বিন্যান্সের কথাই ধরা যায়। ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জের সুবিধা গুলো নিম্নরূপ:

১। আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা আপনার একাউন্ট নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। অন্য কোন থার্ডপার্টি এখানে কোন রূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

২। ডিসেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জে ইমেল পাসওয়ার্ড এর কোন ঝামেলা নেই। যার কারনে সেন্ট্রালাইজ এক্সচেন্জের ইমেল, 2FA জাতীয় কোন সমস্যার সম্মুক্ষীন হবার আশংকা নেই।

৩। ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জের মূল চাবি কাঠি হচ্ছে “প্রাইভেট কি”। যার একক মালিক একমাত্র আপনি।

ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জের অসুবিধা

ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টো এক্সচেন্জ মানেই আপনি আপনার একাউন্টের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন কারী। এখানে অন্য কেউ কোন ভাবে আপনার একাউন্ট নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম নই। তাই নিজ ওয়ালেটের ব্যালান্সের জন্য আপনি নিজেই দ্বায়বদ্ধ। সহজ কথায় আপনার “প্রাইভেট কি” যতক্ষন নিরাপদ থাকবে আপনার একাউন্টের ব্যালান্সও নিরাপদ থাকবে। কোন ভাবে আপনার ওয়ালেটের “প্রাইভেট কি” হারিয়ে ফেললে আপনি আপনার কয়েন চিরতরে হারিয়ে ফেলবেন। কারন তা ফিরে পাবার বা রিকাভার করার কোন ব্যবস্থা নেই।

উপরুক্ত সমস্যা এড়াতে আপনাকে অবশ্যই আপনার ওয়ালেটের “প্রাইভেট কি” নিরাপদ এবং একাধিক জায়গায় সংরক্ষন করতে হবে। এছাড়া ডিসেন্ট্রালাইজ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জের দ্বিতীয় কোন অসুবিধা আমার চোখে পড়ে না।

কিছু ডিসেন্ট্রালাইজ ট্রেডিং প্লাটফর্ম:

১। Nash

২। EtherDelta (ForkDelta)

৩। Binance DEX

৪। Idex

কিছু সেন্ট্রালাইজ ট্রেডিং প্লাটফর্ম:

১। Binance

২। Kucoin

৩। Bit-Z

৪। CoinBene


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *