ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের উপর বিভিন্ন আক্রমনের মধ্যে 51% Attack অন্যতম। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে যারা নতুন তাদের কাছে 51% Attack কি তা অনেকটাই অজানা।

আজ আমরা 51% Attack কি এবং কিভাবে তা সংঘটিত হতে পারে তার সম্ভাব্য বিষয় নন-টেকনিক্যাল ভাষা সহকারে বুঝার চেষ্টা করবো।

ব্লক কিভাবে তৈরি হয়?

আমরা জনি একটি ব্লকে ৩টি তথ্য থাকে, এর মধ্যে ১ম হচ্ছে ডেটা, ২য় হ্যাস এবং তৃতীয়টি হচ্ছে পূর্বের ব্লকের হ্যাস। আর একটি ভ্যলিড ব্লক তৈরীর জন্য ৫০% এর উপর মাইন্যারদের মতামত গ্রহন করা হয়।

এখন এই সব বাদ দেন। চলুন নন-টেকনিক্যাল আলোচনাই যায়।

মনে করেন ১০ জন কর্মী একটি বল তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। ১০জনের কাজ হচ্ছে বল তৈরি করা এবং পরবর্তীতে সেই বল গুলো যাচাই করা, যে ঠিক আছে কিনা। আর এই বল তৈরির জন্য সকলের নিজস্ব মেশিন রয়েছে, নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী। অর্থাৎ ফ্যাক্টরি থেকে তাদের ম্যাশিন দেওয়া হয়নি। যদিও এমনটা হওয়ার কথা নই বস্তব ফ্যাক্টরিতে।

তবে আমাদের এই আলোচনাই কিন্তু আমরা কোন মেশিন দিবনা কর্মীদের।

যেহেতু ১০ জন নিজ নিজ সাদ্ধ্য অনুযায়ী মেশিন ব্যবহার করে বল তৈরি করবে। তাই বলাই যায় সকলের একই সক্ষমতা অনুযায়ী মেশিন হবে না।

এখন ধরুন, এই দশজনের মধ্যে ৫ নং ব্যক্তি একটি বল তৈরি করলো এবং যে বলটি প্রথমে তৈরি করেছে, সে বাকী সকল কর্মীদের জানিয়ে দিলো যে, সে একটি বল তৈরি করেছে। এখন যেহেতু ১০ জনের মধ্যে একজন প্রথমেই বল তৈরি করেছে; তাই বাকি ৯ জনের কাছে থেকে মতামত নেওয়া হবে যে বলটি সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কি না?

এখন এই ৯ জনের মাধ্যে ৬জন ঘোষনা করে দিলো যে, তার বল তৈরি সঠিক হয়েছে। তখন সেই বলটি গ্রহন যোগ্যতা পাবে। অর্থাৎ ৫০% এর বেশি মানে ৫১% কর্মী ঘোষনা দিলেই তা গ্রহন যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর এই বল; যে প্রথমে তৈরি করেছিলো সে এর বিনিময়ে কিছু অর্থ পাবে।

এখানে একটি বিষয় এই যে, বলটি তৈরির জন্য সকলেই চেষ্টা করেছিলো, সকলেরই তাদের মেশিন অনুযায়ী একটা বিদুৎ খরচ হয়েছে। কিন্তু যে বল তৈরি করেছিলো সেই শুধু বলটি তৈরির জন্য অর্থ পাবে। বাকি যারা চেষ্টা করেছিলো তারা কিন্তু কোন অর্থ পাবে না।

এই ভাবে আবার সকলে পরবর্তী বল তৈরির জন্য লেগে যাবে। আবার এর মধ্যে হতে যে প্রথমে বল তৈরি করবে তার বলটি যাচাই করা হবে। এইরূপ চলতেই থাকবে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে যার মেশিন যত শক্তিশালী হবে তার বল তৈরির করার সম্ভাবনাও তত দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

টেকনিক্যাল এই পদ্ধতিকে POW (Proof of Work) বলা হয়।

এখন এই খানে কর্মীদৈরকে মাইনার হিসেবে ধরুন। বল তৈরির মেশিন গুলোকে মাইনিং মেশিন ধরুন। আর বল গুলোকে ব্লক হিসেবে ধরুন। আশা করি ব্লক তৈরির পদ্ধতি খুব সহজেই ধারনাই নিতে পারছেন।

এখন আসি হ্যাস পাওয়ারের বিষয়ে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন 51% Attack কি? জানতে এসে কোন জগতে পড়লামরে ভাই! কি সব ভূগোল পড়াতে শুরু করলো?

আসলে আমি ভূগোল পড়াচ্ছি না। ভূগোলে ভাল রেজাল্টও হয়নি। তাই আমি ভূগোল যে পড়াচ্ছি না, এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন।

আরো পড়ুন: মাল্টিসিঙ্গনেচার ওয়ালেট ব্যবহার গাইড

হ্যাস পাওয়ার কি?

আমারা জানি মাইনিং করার জন্য বেশ ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন বিদুৎতের। মনে করুন আমি বিটকয়েন মাইনিং করতে চাইছি। এর জন্য আমার CPU, GPU অথবা ASIC এর প্রয়োজন। এই সবগুলোরই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা। যেমন CPU এর চেয়ে GPU ক্ষমাতাশালী। তেমন GPU এর চেয়ে ASIC অধিক ক্ষমতাশালী।

এখন ধরে নিলাম, এর মধ্যে আমি কিছু ইকুইপমেন্ট আর বিদুৎ ব্যবস্থা করে মাইনিং শুরু করলাম। এখন নিশ্চয় সকলেই অবগত রয়েছেন যে, আমি শুধু একাই মাইনিং করছি না। আমার মতো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি মাইনিং করছে।

আমি একাই একজন ব্যক্তি অল্পকিছু ইকুইপমেন্ট নিয়ে মাইনিং শুরু করলাম। এখন আমার চেয়ে বড় বড় কম্পানি আমার চেয়ে অধিক খরচ করে মাইনিং শুরু করেছে। তো, নিশ্চয় বড় বড় কম্পানি গুলোর তুলনাই আমার ইকুইপমেন্ট খুবই নগন্য। অর্থাৎ আমার মাইনিং মেশিনের চেয়ে বড় মাইনিং কম্পানি গুলোর মেশিন বহু গুন শক্তিশালি।

যেমনটা সেই বল তৈরীর মেশিন গুলোর কথা ভেবে দেখুন।

তাদের এই মাইনিং মেশিনের ক্ষমতাকেই হ্যাসিং পাওয়ার বলা হয়।

এখন বিষয় হচ্ছে যার যত হ্যাসিং পাওয়ার, তার ব্লক মাইনিং করার অগ্রধীকারও তত বেশি। এখন আমি মাইনিং করার জন্য বসে বসে বিদুৎ খরচ করছি কিন্তু মাইনিং করার জন্য আমি কোন সুযোগ পাচ্ছি না। তাহলে আমি কেন শুধু শুধু বিদুৎ খরচ করবো?

মনে করুন আমি আমার মতো আরো ১০জনকে পেলাম যাদের ইকুইপমেন্ট অল্প। তো আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ১০ জনে মিলে এক সাথে মাইনিং করবো। এর জন্য আমরা একটা পুল তৈরি করলাম। আর সেই সাথে আমাদের মত পাবলিকদের জন্য সেখানে যোগ হওয়ার সুবিধাও দিলাম। তাহলে কি হচ্ছে, আমাদের ১০জন বা ১৫ জনের হ্যাস পাওয়ার যোগ হয়ে একটি শক্তিশালী হ্যাস পাওয়ার তৈরি হচ্ছে। যার ফলে ব্লক তৈরির জন্য আমাদেরও অগ্রাধীাকর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা নিশ্চয় Poolin, F2pool ইত্যাদির নাম শুনেছি। যদি না শুনে থাকেন তবে নিচের ছবিটি দেখুন।

51% attack কি

এখানে বেশ কিছু মাইনিং পুল দেখতে পাচ্ছেন। আর সেই সাথে কার কাছে কত পরিমান হ্যাস পাওয়ার আছে তাও দেখাচ্ছে। যেমন Poolin এর কাছে ১৭.৭%, BTC.com এর কাছে ১৪.২%।

এখন ধরুন নতুন কিছু ট্রানজেকশন হলো, এখন এই ট্রানজেকশন গুলোকে নিয়ে একটি ব্লক তৈরি করার জন্য সব মাইনার লেগে গেল। এখন যার হ্যাসিং পাওয়ার যত বেশি তার সম্ভাবনাও অনেক বেশি পরবর্তী ব্লক তৈরির জন্য।

উপরের ছবি দিয়ে উদাহরন দিতে হলে বলা যায়, Poolin এর চান্স ১৭.৭%, F2Pool এর চান্স ১৭%, BTC.com এর চান্স ১৪.২% এইভাবে বাকি গুলোর।

আবার আপনি ইকুইপমেন্ট না বাড়িয়ে আপনি হ্যাস পাওয়ার কিনে নিতেও পারেন। হ্যাস পাওয়ার বিক্রয় করে এমন একটি সাইট হচ্ছে https://www.nicehash.com/

একটি কথা না বললেই নই। আর তা হচ্ছে এই ধরনের মাইনিং পুল তৈরি ডিসেন্ট্রালাইজেশনের জন্য হুমকি। কারন পুল তৈরিতে সকলে একসাথে হয়ে সেন্ট্রালাইজেশন তৈরি করছে। যার দ্বারাই 51% Attack হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।

আমাদের মোটামুটি ভূগোল পড়ানো শেষ। এখন চলুন ভূগোল পড়ে যা জানলাম তা একটু বাস্তবে প্রয়োগ করি।

51% Attack কি এবং কিভাবে হতে পারে?

আমরা আগেই জেনেছি যে, ৫০% এর বেশি ইউজার বা মাইনার কোন ব্লককে সঠিক বলে ঘোষনা দিলেই তা ভ্যালিড বলে বিবেচিত হবে এবং ব্লকচেইনে সেই ব্লক এ্যড হয়ে যাবে।

এখন কেউ যদি বিটকয়েন নেটওয়ার্কে 51% Attack করতে চাই তবে তার কাছে মোট হ্যাশ পাওয়ারের ৫১% হ্যাশ পাওয়ার থাকা লাগবে।

আর এই পুল গুলো হচ্ছে এই রকম একটা হুমকি। যেমন ধরুন Poolin, F2Pool, BTC.com আর AntPoo এর যদি একসা হয়ে 51% Attack করতে চাই তবে করতে পারবে। কারন এই ৪টি পুল একসাথে হলে ৫১% এর উপরে হ্যাশ পাওয়ার একসাথে হয়ে যাবে।

যার ফলে তারা বিটকয়েন নেটওয়ার্কের মাঝে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে।

51% attack কি

এখন কথা হলো কেউ যদি 51% Attack করতে, তবে নেটওয়ার্কে কি কি পরিবর্তন ঘটাতে পারে?

যদি কোন ভাবে কোন হ্যাকার ৫১% হ্যাশ পাওয়ার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যায় তবে সেই হ্যাকার বিটকয়েন নেটওয়ার্কের ব্লকচেইনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

হ্যাকার যেহেতু ৫১% হ্যাশ পাওয়ারের ক্ষমতা পেয়ে গেছে তাই সেই যেকোন ব্লককে ভ্যলিড বা ইনভ্যলিড করার ক্ষমতা পেয়ে যাবে।

ডাবল স্পেন্ডিং করে ট্রানজেকশন রিভার্স করতে পারে।

ব্লকের কনফার্মেশন টাইম বাড়াতে পারে।

তবে হ্যাঁ পূর্বের ব্লকের মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন করতে পারবে না।

আর তার কাছে ততক্ষন পর্যন্ত পরবর্তী ব্লকের উপর নিয়ন্ত্রন থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত সে ৫১% হ্যাশ পাওয়ারের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে।

যেমনটা ETC তিনবার 51% Attack এর কবলে পড়েছিলো। শেষবার এই সমস্যাই পড়েছিলো ২৯ আগষ্ট ২০২০ তারিখ। যার ফলে হ্যাকার ডাবল স্পেন্ড করে ৫.৬ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছিলো।

আর ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অন্য যেকোন ধরনের আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিপ্টো কমিউনিটিতে যোগ হয়ে থাকতে পারেন: https://t.me/Bangla_Cryptocurrency

এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির বিভিন্ন Airdrop, Bounty বা যেকোন ধরনের প্রমোশনাল অফার পেতে এই গ্রুপে জয়েন হয়ে থাকতে পারেন: https://t.me/Crypto_BountyAirdrop

সতর্কতাঃ- ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অধিক ভলটালিটির কারনে ট্রেডিং করা অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এই পোষ্টে কাউকে এই মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যদি কেউ ট্রেড করতে চাই, তবে তা সে নিজের দায়িত্বে করবে, এর জন্য এই ব্লগের কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে না।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *