আপনি যেহেতু এই টপিকটি পড়াতে আগ্রহী হয়েছেন, সেহেতু আমি ধরেই নিব যে, আপনি বিটকয়েন সম্পর্কে অবগত আছেন।
আর সেই সাথে এটাও ধারনা করতে পারি যে আপনি কিছু না কিছু বিটকয়েনের মালিকও বটে। যার করনেই হয়তো আপনি এমন একটি নিরাপদ বিটকয়েন ওয়ালেট খুজছেন, যেখানে আপনি আপনার বিটকয়েন সুরক্ষিতভাবে জমা রাখতে পারবেন।
বস্তুত বিটকয়েন ধীরে ধীরে এতটাই শক্তিশালী একটি ক্রিপ্টোকারেনসিতে পরিণত হচ্ছে যে, তা সংরক্ষনের জন্য ভাল একটি বিটকয়ন ওয়ালেট প্রয়োজন। আর সাধারণত যেই বস্তু যত দামী, তার সংরক্ষনও তত সুন্দর ও মোজবুত হওয়া প্রয়োজন।
ওয়ালেটের প্রকারভেদ
ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট সাধারনত চার/পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে।
১। ওয়েব ওয়ালেট। যেমন- কয়েনবেজ, ব্লকচেইন ডট কম ইত্যাদি।
২। মোবাইল ওয়ালেট। যেমন- ট্রাস্টওয়ালেট, ব্রেড ওয়ালেট ইত্যাদি।
৩। ডেস্কটপ ওয়ালেট। যেমন- বিটকয়েন কোর, ইলেক্ট্রাম ইত্যাদি।
৪। পেপার ওয়ালেট। যেই ওয়ালেটের তত্য কোন পেপারে প্রিন্ট করে রাখা হয়। বস্তুত এটিকে আলাদাভাবে কোন ওয়ালেট বলার প্রয়োজন রাখে না। যার কারণে এই বিষয়টিকে আমি কোন আলাদা ভাবে ওয়ালেটের প্রকারভেদে রাখতে রাজি নই। যাই হোক, সকলের অবগতির জন্য এখানে একটু আলাদাভাবে উল্লেক্ষ করলাম।
৫। হার্ডওয়ার ওয়ালেট। যেমন- লেজার ন্যনো এস, ট্রিজোর ইত্যাদি।
এখন ওয়ালেটের প্রকারভেদ অনুযায়ী যদি সকল ওয়ালেটের গুনাগুন বলতে যায়, তবে পোষ্টটি অনেক বড় হয়ে যাবে। যার ফলে অনেকেই ধর্য্য হারাবেন পুরো পোষ্টটি পড়তে।
সকল কিছু বিবেচনা করে আমি সকল ওয়ালেটের মধ্যে থেকে শুধু কোন ৭টি ওয়ালেট (সর্বউত্তম) ব্যবহার করা যেতে পারে তা এখানে উল্লেক্ষ করবো।
সর্বউত্তম ৭টি বিটকয়েন ওয়ালেট
১। লেজার ন্যনো এস বা এক্স: লেজার ন্যনো একটি হার্ডওয়ার ওয়ালেট। আপনি যদি সর্বাধিক সিকিউরিটি আশা করে থাকেন, তবে আপনি লেজার ন্যনো এস বা এক্স ব্যবহার করতে পারেন। এই ওয়ালেটে শুধু বিকয়েন নই, আপনি অল্টার কয়েনও রাখতে পারবেন। তবে এই ওয়ালেট আপনাকে ক্রয় করে নিতে হবে। লেজার ন্যনো ক্রয় করতে অন্য কোন মাধ্যম নই, শুধু মাত্র তাদের ওয়েব সাইট থেকে ক্রয় করুন।
শুধু ৭টি বিটকয়েন ওয়ালেট নই, যেকোন বিটকয়েন ওয়ালেটের মধ্যে এই হার্ডওয়ার ওয়ালেটকেই শেরা ধরা হয়।
২। ইল্কেট্রাম: ইল্কেট্রাম একটি ডেস্কটপ ওয়ালেট। ডেস্কটপ ওয়ালেটের ক্ষেত্রে ইল্কেট্রামকে বাছাই করার কারন ইল্কেট্রাম ব্যবহার করা সকলের জন্য অনেক সহজতম পদ্ধতি। আর এটি সম্পূর্ন নোড ডাউনলোড করে না, তাই খুব দ্রুত আপনার ওয়ালেট ব্লকচেইনের সাথে কানেক্ট হয়। যা বিটকয়েন কোর বা আরমরি ওয়ালেটের ক্ষেত্রে হয় না। যদিও বিটকয়েন কোর বা আরমরি ব্যবহার করতে পারলে এর চাইতে ভালই হয়। কিন্তু ব্যবহার সহজতর হওয়ায় ইল্কেট্রাম ব্যবহারই জনপ্রিয়।
৩। এক্সোডাস: এক্সোডাস একটি মাল্টিকয়েন ডেস্কটপ এবং মোবাইল ওয়ালেট। এই ওয়ালেট ব্যবহার করতে হলে, এই ওয়ালেট ইন্সটল দিয়ে একাউন্ট খোলার সময় 12-word recovery phrase দিয়ে থাকবে। যা আপনাকে অতি সতর্কতার সহিত যত্ন সহকারে রাখাতে হবে। কারন এই রিকভারি ফ্রেজ হারালে আপনি আপনার কয়েন চিরতরে হরাবেন। কারন ইল্কেট্রামের মতো আপনি আপনার ওয়ালেটের সীডের সাথে ওয়ালেটের “প্রাইভেট কি” পাবেন না। অর্থাৎ ইল্কেট্রাম ওয়ালেট ব্যকাপ করতে আপনাকে ওয়ালেট “সীড” এবং ওয়ালেটের “প্রাইভেট কি” ব্যকাপ নেওয়ার সুবিধা দিয়ে থাকে।
৪। ব্লকচেইন: ব্লকচেইন একটি ওয়েব ওয়ালেট। ব্লকচেইন আপনাকে বিটকয়েনের পাশা-পাশি বেশ কয়েকটি কয়েন ষ্টোর করার সুবিধা দিয়ে থাকবে। অনেক নতুন কয়েন তাদের ওয়ালেটে যোগ হবার সময় এয়ারড্রপ দিয়ে থাকে। যার সুবিধা আপনিও পেতে পারেন। ব্লকচেইন ব্যবহার করতে তাদের দেওয়া একটি ওয়ালেট আইডি এবং আপনার পছন্দকৃত পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে ব্যবহার করতে হবে। কোন কারনে আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে একাউন্ট খোলার সময় যে 12-word recovery phrase দিয়ে থাকে, তা দিয়ে আপনাকে আপনার ওয়ালেট রিকভার করতে হবে।
৫। ট্রাস্ট ওয়ালেট: ট্রাস্ট ওয়ালেট একটি মোবাইল ওয়ালেট। আপনি এই ওয়ালেট ব্যবহার করতে চাইলে আপনার একটি অবশ্যই স্মার্টফোন থাকা লাগবে। ট্রাস্ট ওয়ালেটও একটি মাল্টিকয়েন বেজ ওয়ালেট। আপনি এখানে বিটকয়েন সহকারে ততধিক অল্টার কয়েন ষ্টোর করতে পারেন। এই ওয়ালেট সুরক্ষার জন্য আপনাকে এখানেও 12-word recovery phrase দিয়ে থাকবে। যা যত্নসহকারে সংরক্ষন করতে হবে। ১২টি ওয়ার্ড ছাড়া ২য় কোন পদ্ধতি নেই এই ওয়ালেট রিকভার করার জন্য।
৬। ব্রেড ওয়ালেট: ব্রেড ওয়ালেট একটি মোবাইল ওয়ালেট। যা আপনি আপনার এ্যনড্রোয়েড এবং আইফেনে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ওয়ালেট সুরক্ষার জন্য পিন ব্যবহার হয়ে থাকে। সেই সাথে ওয়ালেট ব্যকাপ-রিস্টোর করার জন্য 12-word recovery paper key রয়েছে। আপনি এই ওয়ালেটে বিটকয়েন সহ অন্যান্য কয়েনও ষ্টোর করে রাখতে পারবেন।
৭। কয়েনবেজ: কয়েনবেজ একটি ওয়েব ওয়ালেট। যা আপনাকে বিটকয়েন সহকারে নির্দিষ্ট কিছু কয়েন ষ্টোর করার সুবিধা দিয়ে থাকবে। এবং এই ওয়ালেট আপনাকে ভ্যরিফাই করে রাখতে হবে। যাতে পরে কোন সমস্যা হলে সহজে রিকভার করতে পারেন। কারন এই ওয়েব ওয়ালেটটি রিকাভার করার জন্য ইমেল এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বলা যায়, এই ওয়ালেটের নিয়ন্ত্রন পুরোটাই কয়েনবেজ কর্তৃপক্ষের হাতে। এছাড়া আপনার ওয়ালেটের বাড়তী সিকিউরিটির জন্য 2FA ব্যবহার করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
উপরুক্ত ৭টি বিটকয়েন ওয়ালেট অথবা উল্লেক্ষিত ওয়ালেট গুলো ছাড়া আপনি যেই ওয়ালেটই ব্যবহার করেন না কেন। আপনার ওয়ালেট ব্যবহার করার পূর্বে একটি বিষয় মাথায় রাখাতে হবে যে, কোন ওয়ালেট আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সির সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকবে।
ইংরেজি ভাষায় একটি বচন প্রায় লক্ষ্য করা যায়, “Not your key, Not your money.
0 Comments