আমরা ইতপূর্বেই মার্জিন ওয়ালেট কি তা জেনেছি। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ গুলোতে আমরা মাৃর্জিন ওয়ালেট দুই ধরনের দেখতে পাই। যেমন আপনি যদি বিন্যান্সের মার্জিন ওয়ালেটে ট্রেড করে থাকেন তবে দেখতে পাবেন সেখান মার্জিন ওয়ালেটের দুইটি ট্যাব রয়েছে। নিচের ছবির মতো।

Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেট
Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেট

দুইটি অপশনই মার্জিন ওয়ালেটের জন্য এবং দুইটি ওয়ালেটেই আপনি ৫গুন মার্জিন বা ধার নিয়ে ট্রেড করতে পারবেন।

আপনি Cross ওয়ালেটে যে পেয়ারে ট্রেড করতে পারবেন তা Isolated ওয়ালেটেও ট্রেড করতে পারবেন। সহজ কথাই ট্রেড বা ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি উভয়টিতে একই সুবিধা পেয়ে থাকবেন।

তাহলে এখন প্রশ্ন এসে যায় যে, যদি আমি সব কিছুই করতে পারবো যেকোন ওয়ালেট ব্যবহার করে, তবে দুইটি ওয়ালেট দেওয়ার অর্থ কি?

জী হ্যাঁ, বেশি কিছু পার্থক্য নেই। তবে, যে পার্থক্য আছে তা হয়তো আপনাকে দুইটির মধ্যে এইটা না ঐটা ব্যবহার করবো এমন প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আসাতে যথেষ্ট হতে পারে।

যাইহোক, কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় আসা যাক।

বি.দ্র: ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে।

Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেটের পার্থক্য?

Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেটের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা হচ্ছে——–

Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেটের পেয়ার এবং ব্যলান্স

আপনি যখন Cross মার্জিন ওয়ালেটে ট্রেড করবেন তখন একটি ক্রিপ্টোর বিপরীতে যেসকল ক্রিপ্টোগুলো রয়েছে আপনি সব গুলোতেই একই ব্যলান্স দিয়ে ট্রেড করতে পারবেন। যেমন ধরুন: আপনি আপনার স্পট ওয়ালেট থেকে Cross মার্জিন ওয়ালেটে BTC ট্রান্সফার করলেন। এখন আপনি চাইলেই এই ETH দিয়ে Cross মার্জিন ওয়ালেটে যতগুলো পেয়ার রয়েছে, যেমন- BTC/USDT, BTC/USDC, BTC/BUSD এর মধ্যে যেকোন পেয়ারে ট্রেড করতে পারবেন।

নিচের স্ক্রিনশটটি খেয়াল করুন।

Cross মার্জিন
Cross মার্জিন ওয়ালেট ইন্টারফেস

কিন্তু Isolated মার্জিন ওয়ালেটে প্রতিটি পেয়ার ভিন্ন ভিন্ন। যার ফলে আপনি যে পেয়ারে ট্রেড করতে চান শুধু মাত্র সেই পেয়ারে থেকে ডিপোজিট বা ব্যলান্স ট্রান্সফার করতে হবে। আপনি এক পেয়ারে ডিপোজিট বা ট্রান্সফার করে অন্য পেয়ারে ট্রেড করতে পারবেন না। যেমন ধরুন, আপনি Isolated মার্জিন ওয়ালেটে ETH/BTC ওয়ালেট থেকে BTC ট্র্যন্সফার করলেন। তাহলে আপনি সেই BTC দিয়ে আপনাকে ETH/BTC পেয়ারেই ট্রেড করতে পারবেন।

আপনি যদি মনে করেন আপনারতো BTC ব্যলান্স আছেই তাই BTC/USDT পেয়ারে ট্রেড করবো। কিন্তু আপনি তা পারবেন না। আপনি যখন Isolated মার্জিন ওয়ালেট থেকে BTC/USDT পেয়ারে ট্রেড করার জন্য ট্রেড চার্ট থেকে পেয়ারটি বাছাই করবেন তখন দেখবেন আপনার সেই পেয়ারে BTC ব্যলান্স দেখাচ্ছে না। কারণ আপনি স্পট ওয়ালেট থেকে BTC ট্র্যন্সফার করার সময় ETH/BTC পেয়ারের “Transfer” অপশনটি বাছাই করে BTC ট্র্যন্সফার করেছিলেন।

নিচের স্ক্রিনশটটি লক্ষ করুন।

isolated-wallet-interface
Isolated মার্জিন ওয়ালেট ইন্টারফেস

উপরের স্ক্রিনশটটিতে ২ এবং ৩ নং দ্বারা চিহ্নিত পেয়ারের BTC ব্যলান্সটি খেয়াল করে দেখুন। দেখবেন আমি ETH/BTC পেয়ার থেকে BTC ট্র্যন্সফার করায় শুধুমাত্র সেই পেয়ারেই আমার BTC ব্যলান্স দেখাচ্ছে। অন্য কোন পেয়ারে তা দেখাচ্ছে না।

একটি বিষয় না বল্লেই নই, Isolated মার্জিন ওয়ালেটে প্রথমিক অবস্থায় কোন পেয়ারই এনএবল করা থাকে না। আপনাকে নিজে থেকে যেই যেই পেয়ারে ট্রেড করতে চান তা এনএবল করে নিতে হবে।

এখন আপনার প্রশ্ন, Isolated মার্জিন ওয়ালেটের ব্যলান্স পদ্ধতি এমনটি হবার কারণ কি?

এমনটি হবার কারন, যাতে লিকু্ইডেশানের কারণে আপনার সকল ট্রেড ক্লজ না হয়ে যায়। বিস্তারিত আসছে ধীরে ধীরে, পড়তে থাকুন….. :)।

লিকুইডেশান কি?

লিকুইডেশানের বাংলা শাব্দিক অর্থ ধার পরিশোধ।

মার্জিন ট্রেডিংয়ে যেহেতু ধার নিয়ে ট্রেড করতে হয়। আর এই ধার ৫ গুন পর্যন্ত। ৫গুন ধার নিয়ে আপনি যদি ধার পরিশোধ করতে ব্যর্থ হোন তবেতো আপনাকে ধার দেওয়ায় এক্সচেন্জ লসে পড়ে যাবে। আর এই কারনেই এই লিকুইডেশান।

চলুন ছোট্ট একটি উদাহরন দিয়ে লিকুইডেশান বুঝার চেষ্টা করি।

মনে করেন আমি বিন্যান্সে এক্সচেন্জের কাছে থেকে ১০০ ডলারের ব্যলান্স নিয়ে ৫ গুন ধার করলাম। এখন আমার ট্রেড কারার ক্যপাবিলিটি হচ্ছে ৫০০ ডলার সমান। ধরুন, আমি এই ৫০০ ডলার ব্যালান্স দিয়েই ট্রেড নিলাম। যদি প্রফিট হয়ে তবে লিকুইডেশানের কোন ঝামেলা নেই। আর যদি লস হতে থাকে এবং এত পরিমান লস হয় যে, আমার প্রকৃত ব্যলান্স ১০০ ডলার সেই লস কাভার করতে পারবে না; তখন আমার মূল ব্যলান্স “এক্সচেন্জের অটোমেটিক সিষ্টেম” বিক্রয় করে দিবে। অর্থাৎ আমার ব্যলান্স শূন্য হয়ে যাবে।

এখন ভাবতে পারেন তা হলে ধার নিয়ে কি লাভ? ধার নিয়ে সেটাই লাভ যা ১০০ ডলার দিয়ে লাভ করতে পারবেন না। অর্থাৎ ধার ছাড়া আপনি ১০০ ডলার দিয়ে শুধু ১০০ ডলার সমানই ট্রেড করতে পারবেন। যার ফলে প্রফিট হলে সেই হিসেবেই হবে।

আরেকটি উদাহরন দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাক। মনে করুন এখন BTC এর দাম ১০,০০০ (দশ হাজার) ডলার। আপনি ধার ছাড়া ট্রেড করলে ১০০ ডলার দিয়ে 0.01 BTC কিনতে পারবেন। কেনার পর আপনার BTC এর দাম এক পর্যায়ে ১২০০০ (বারো হাজার) ডলারে পৌছাল। এখন আপনি আপনার BTC বিক্রয় করে দিলে প্রফিট হবে ২০ ডলার। কিন্তু আপনি যদি ধার নিয়ে ট্রেড করতেন তবে আপনি ৫গুন ধার পাবার কারনে আপনি ৫০০ ডলার দিয়ে BTC এর দাম ১০,০০০ (দশ হাজার) ডলার থাকায় আপনি কিনতে পারতেন 0.05 BTC এবং যখন BTC এর দাম সেই একই পর্যায়ে যেত অর্থাৎ ১২০০০ (বারো হাজার) ডলারে তাহলে আপনার প্রফিট হতো ১০০ ডলার।

এই হচ্ছে ধার নেওয়ার সুবিধা।

Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেটের লিকুইডেশানের ক্ষেত্রে পার্থক্য

Cross এবং Isolated মার্জিন একাউন্টের প্রধান পার্থক্য লিকুইডেশান।

চলুন আবার একবার পূর্বের উদাহনের কাছাকাছি ফিরে যায়। ধরুন, আপনি Cross মার্জিন ওয়ালেটে ১০০ ডলার ডিপোজিট করেছেন এখন আপনি এই ১০০ ডলার দিয়ে ৫ গুন ধার নিলেন। তাহলে এখন আপনার ট্রেড করার মত ব্যলান্স হচ্ছে ৫০০ ডলার।

এখন ধরে নিলাম, আপনি এই ৫০০ ডলার দিয়ে দুইটি পেয়ারে ট্রেড নিলেন এর মধ্যে ETH/USDT পেয়ারে ২৫০ ডলার সমান এবং BTC/USDT পেয়ারে ২৫০ ডলার সমান। এখন যদি দুইটি পেয়ারেই প্রফিটে থাকেন তবে তো লিকুইডেশানের কোন ঝামেলা নেই।

কিন্তু এই দুইটির মধ্যে একটিতে প্রফিটে এবং অন্যটিতে লোসে আছেন। যদি প্রফিটের পরিমান বেশি হয় তবেও কোন ঝামেলা নেই। কিন্তু যদি লসের পরিমান বেশি হয় এবং এতটাই লস যে আপনার নিজস্ব ব্যলান্স ১০০ কাভার না করে তবে আপনার দুইটি ট্রেডই ক্লোজ হয়ে আপনার ব্যলান্স লিকুইডেটেড হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার ব্যলান্স শুণ্য হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতি আপনার Cross মার্জিন ওয়ালেটের ক্ষেত্রে ঘটে থাকবে।

এখন চলুন Isolated মার্জিন ওয়ালেটের উদাহরনে।

আপনি যদি একই ব্যলান্স নিয়ে একই ধরনের ট্রেড Isolated মার্জিন ওয়ালেটে নেন এবং উপরুক্ত উদাহরনটি এই একউন্টেও ঘটে থাকে তবে আপনার যেই পেয়ারে লস হবে শুধু সেই পেয়ারটি ক্লোজ হবে। অপরটি একটিভই থাকবে। কারন আমি আগেই বলেছি যে, আপনি Isolated মার্জিন ওয়ালেটে ডিপোজিট করতে হলে আলাদা আলাদা ভাবে পেয়ার বাছাই করে ডিপোজিট করতে হবে। যার করনে প্রতিটি পেয়ারে আলাদা আলাদা ভাবে লিকুইডেশান কার্যকর হবে। একটি পেয়ারের লিকুইডেশান অন্য পেয়ারের জন্য প্রযোজ্য না।

যার কারণ আপনার ১০০ ডলারের মধ্যে আপনি ৫০ ডলার ডিপোজিট করবেন ETH/USDT পেয়ারে এবং বাকি ৫০ ডলার ডিপোজিট করবেন BTC/USDT পেয়ারে। আর দুইটি পেয়ারে ৫গুন মার্জিন নিয়ে ট্রেড করলে আপনি ৫০০ ডলার সমানই ট্রেড করতে পারবেন।

এই হচ্ছে মোটামুটি Cross এবং Isolated মার্জিন ওয়ালেটের মধ্যে পার্থক্য।

এছাড়া বুঝতে কিছুটা সমস্যা হলে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। তাতে বুঝার মধ্যেএকটু ফাকফোকর থেকে গেলে পুরন হবে বলে আশা রাখি। তারপরও বুঝতে সমস্যা হলে আমি আছি তো…..।

আর যাদের Binance এ এখনো কোন একাউন্ট করেন নি এখান থেকে করে নিতে পারেন। আর উপভোগ করতে পারেন ১০% ট্রেডিং ফিস ব্যাক।

আর যারা Binance -এ ট্রেড করেন বা করতে চান অথবা বিন্যান্স সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তবে বাংলাদেশের জন্য বিন্যান্সের যে অফিসিয়াল টেলিগ্রাম গ্রুপ আছে তাতে জয়েন করতে পারেন।

বিন্যান্স বাংলাদেশ অফিসিয়াল টেলিগ্রাম গ্রুপ: https://t.me/BinanceBangladeshi

এছাড়া ফেসবুক গ্রুপেও জয়েন করতে পারেন: https://web.facebook.com/groups/206889177235319/

সতর্কতাঃ- ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অধিক ভলটালিটির কারনে ট্রেডিং করা অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এই পোষ্টে কাউকে এই মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যদি কেউ ট্রেড করতে চাই, তবে তা সে নিজের দায়িত্বে করবে, এর জন্য এই ব্লগের কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে না।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *