দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ মানুষের পাশে দাড়ানো অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।

আমি আপনি হয়তো খুব ভালই দিন কাটাচ্ছি কিন্তু আমার পাশের বাড়ীর পরিবারটি হয়তো অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কেউ বলতে পারচ্ছে, আর কেউ লোকলজ্জার ভয়ে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছে। তাই আমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌পাক যাদের ভাল রেখেছেন তারা এমন ব্যক্তিদের পাশে দাড়ানো দরকার। যারা খাবার অভাবে দিন কাটাচ্ছে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা অতিব জরুরী একটি বিষয়। জী হ্যাঁ, দানে কমে না বরং বাড়ে।

হ্যাঁ বাহ্যিক দৃষ্টিতে হয়তো কমে যেতে দেখবেন। কিন্তু আপনার জন্য আল্লাহ্‌পাক আপনার খরচ কৃত ধন-সম্পদের চাইতে উত্তম প্রতিদান রেখেছেন। যা আল্লাহ্‌পাক দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জাহানে দিয়ে থাকেন।

দানে কমে না বরং বাড়ে

দানে কমে না বরং বাড়ে এই বিষয়টি বোঝার জন্য ছোট্ট একটি অনুপ্রেরনা মূলক বাস্তব ঘটনা বলি।

একরাতে হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ তিনার দরজায় কারো শব্দ শুনতে পেয়ে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। আগন্তক সালাম দিয়ে তার পরিচয় উল্লেক্ষ করে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলেন।

হযরত ওমর (র.) তাকে ভিতরে আশার অনুমতি দিলেন। এরপর আগন্তক ব্যক্তি কানা বিজড়ীত কন্ঠে বললেন, হযরত; আগামীকাল ঈদ। এই দিনে ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় পরিধান করে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। আমারও কয়েকটি ছোট্ট বাচ্চা আছে। কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় এই যে, এখন পর্যন্ত আমি এতটুকু অর্থ জমা করতে পারিনি, যা দিয়ে তাদের আমি কোন জামা-কাপড় কিনে দিতে পারি!

হুজুর, আমি নিতান্তই একজন নি:স্ব ও অসহায়। কিন্তু অবুঝ শিশুরা তো আর সে কথা বুঝে না। ঈদের দিন নতুন জামা কপাড় না পেয়ে মুখ ভার করে বসে থাকবে। যা বাবা হয়ে তা দেখা বড়ই কষ্ট দায়ক। আপনি যদি অনুগ্রহ করে আমার প্রতি আপনার সুদৃষ্টি দিতেন, তবে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আপনাদের সাথে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারতাম।

কথাগুলো শুলে হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) মনোযোগ সহকারে শুনলেন। কিন্তু আগন্তক ব্যক্তিও জানে না যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) এর অবস্থাও তারই মত প্রায়। যাইহোক, হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) এর মাত্র পঁচিশ দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) ছিলো। যা দিয়ে তিনিও ভেবে রেখে ছিলেন তার বাচ্চাদের জন্য কিছু জামা-কাপড় কিনে দিবেন। কিন্তু তিনি নিজের প্রয়োজনের চেয়ে সেই ব্যক্তির প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিলেন। এবং সেই মুদ্রা গুলো সেই ব্যক্তিকে দিয়ে দিলেন।

আরো পড়ুন: যাকাতযোগ্য সম্পদ ও যাকাতের হিসাব পদ্ধতি

অর্থ গুলো দিয়ে তিনি পুনরাই ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয়ে গেলেন। খুব বেশি সময় পার হয়নি। এমন মুহুর্তে আবারও তিনার দরজায় কাছে অপর এক ব্যক্তির আগমন হলো। উপস্থিত ব্যক্তিটি হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) কে খুব বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন।

লোকটি বলল, হুজুর; আমি এক সময় আপনার পিতার গোলাম ছিলাম। অর্থের প্রতি আমার প্রচন্ড লোভ ছিল। লোভের বসবর্তী হয়ে আমি একদিন আপনার পিতার পঁচিশটি দিনার (স্বর্ন মুদ্রা) চুরি করে পালিয়ে গিয়েছিলাম।

এই ঘটনা অনেক বছর গড়িয়ে গেছে। কিন্তু এখন আমার বুঝে এসেছে, আমি যা করেছি, প্রচন্ড অন্যায় করেছি। আমার অন্যায়ের জন্য অনুতপত্ত হয়ে আমি আপনার কাছে এসেছি। এখন তো আপনার পিতে বেঁচে নেই। এখন আপনি আপনার পিতার ওরিশদার। তাই আপনার পিতার চুরি করে নিয়ে যাওয়া পঁচিশটি দিনার ফেরত দিতে এসেছে। মেহেরবানী করে এই অর্থগুলো আপনি গ্রহন করুন। আর আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে আপনার গোলাম হিসেবে থাকার সুযোগ দিন। এই বলে তিনি পঁচিশটি দিনার হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) এর হাতে তুলে দিলেন।

হযরত ওমর ইবনে আব্দুর রহমান (র.) পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করলেন। তিনার বুঝতে মোটেও অসুবিধা হলো না যে, এসব কিসের বদলে হচ্ছে। কোত্থেকে এলো এসব সুফল ও বরকত। তিনি মুদ্রাগুলোর দিতে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন- মহান কুদরতওয়ালা দয়ামত আল্লাহ্‌ পঁচিশটি রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে আমাকে পঁচিশটি স্বর্ণ মুদ্রা লাভের সুযোদ দিয়েছেন। নি:সন্দেহে এটি তাঁর পক্ষ থেকে সম্মানজনক হাদিয়া। কেননা, দীর্ঘদিন পূর্বে আমার পিতার হাত থেকে চুরি হয়ে যাওয়া দিনার, আজ ফিরে পাব- এ আমার কল্পনায়ও ছিল না। অত:পর তিনি সাথে সাথে গোলামটিকে আজাদ করে দিলেন। বললেন, যাও তুমি এখন মুক্ত-স্বাধীন। যেখানে মনে চায় সেখানেই চলে যাও। তোমার প্রতি আমার কোন দাবি নেই। গোলাম মুক্তির বার্তা শুনে যার পর নাই আনন্দিত হয়ে আপন গন্তব্যে চলে গেল ।

এখানেই শেষ।

বস্ততুত পক্ষে দানে কমে না বরং বাড়ে তারই একটি বড় প্রমান। তাই আসুন সঙ্কটপূর্ন মুহুর্তে যে যেমন করে পারি অসহায়, দরিদ্র ব্যক্তিদের পাশে দাড়ায়। এর জন্য আপনাকে সব দিতে বলছি না। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে যা দিলে, আপনার নিজের কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। এমন পরিমান দান করুন। মোট কথা আপনার সধ্য মত দান করুন। এতে করে হয়তো আপনার পাশ্ববর্তী ব্যক্তি বা পরিবারটির কিছুটা সমস্যা লাঘব হবে।

আর বিশেষ করে আমাদের সকলেরই আমাদের প্রতিবেশিদের জন্য একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছেই।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *