আমি যখন প্রথম বিটকয়েনের নাম শুনেছিলাম তখন বিটকয়েনের হর্তা কর্তা কয়েনবেজকেই মনে করতাম। কয়েনবেজ কি তার সঠিক ধারনা না থাকায়; আমার তখন ধারনা ছিলো বিটকয়েন মানেই কয়েনবেজ। এছাড়া বিটকয়েন ছাড়া যে আরো কয়েন আছে সেই ধারনাই ছিলো না।
আমার যতদূর মনে হয়ে আমি ২০১৩-২০১৪ সালের দিকে বিটকয়েনের নাম শুনেছিলাম। আর মনে করতাম freebitco সাইটি থেকেই শুধু বিটকয়েন আর্ন করা যায়। আমি এই সাইট থেকে অনেকবারই উইথড্র করেছি। আর উইথড্র দিতাম কয়েনবেজ একাউন্টে। যতদূর মনে পড়ে আমি উইথড্র করে ৫-৬ ডলার সমান বিটকয়েন রেখেছিলাম কয়েনবেজে। কিন্তু তার দাম প্রায় ১৫ কি ২০ ডলার হয়ে গিয়েছিলো।
আর সেই সময় আমি বিটকয়েনে ইনভেস্ট করার কথা ভাবতেই পারিনি। যতদূর মনে পড়ে আমি বিটকয়েনের দাম ২০০ থেকে ৬০০ ডলারের মধ্যে উঠানামা করতে একাধিক বার দেখেছি।
যাইহোক, কয়েনবেজের কথাই ফিরে আসি। আমি যেমনটা আগে মনে করতাম যে,, বিটকয়েন ষ্টোর করার জয়গা একমাত্র কয়েনবেজই। ঠিক বর্তমানেও অনেক জনকে দেখেছি যে, তারা এখনও বিটকয়েন মানেই কয়েনবেজ কেই মনে করে।
আর আমার মত যারা এখনও কয়েনবেজ সম্পর্কে ধারনা পোষন করেন তাদের উদ্দেশ্য করেই আজকের এই পোষ্ট।
আরো পড়ুন: ক্রিপ্টো মার্জিন ওয়ালেট কি?
কয়েনবেজ কি?
কয়েনবেজ কি তার আগে আমাদের জানা দরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বা বিটকয়েন কি? মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন একটি ডিজিটাল কারেন্সি। যা ধারা ছুয়া যায় না। যার লেনদেন একটি ব্লকচেইন পদ্ধতি অবলম্বনে হয়ে থাকে।
আর কয়েনবেজ না হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি, না হচ্ছে বিটকয়েন, আর নাহি কোন ব্লকচেইন। কয়েনবেজ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ বা ডিজিটাল কারেন্সি এক্সচেন্জ। তবে বাংলাদেশিদের জন্য নেহায়েতই ক্রিপ্টোকারেন্সি ষ্টোর করার জন্য জায়গা। কারণ বাংলাদেশিদের জন্য কয়েনবেজ কোন এক্সচেন্জ অনুমতি দেয় না।
পূর্বে কয়েনবেজে কাউকে ইনভাইট করলে ১০ ডলার করে দিত শর্তসাপক্ষে। বর্তমানে সেই সুবিধাও উঠিয়ে নিয়েছে। তবে এখন কয়েনবেজ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। আগে শুধু মাত্র coinbase.com -ই ছিলো যেখানে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ (বাংলাদেশিদের জন্য প্রযোজ্য নই) এবং ষ্টোর করে রাখতে পারতেন। আর এখন এটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। কয়েনবেজের ভাষায় coinbase.com এবং wallet। অর্থাৎ coinbase.com হচ্ছে শুধু এক্সচেন্জ তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি সেখানেও হোল্ড করতে পারবেন। আর wallet হচ্ছে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের মতোই।
coinbase.com বলেন আর wallet তাদের দুইটির কোনটিই ডিসেন্ট্রালাইজ নই। তাদের ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করে দেখবেন তারা বলে থাকে যে, তারা ফি নিজেরা কাটেনা। একদম বাজে কথা। তারা নিজেরাই ফি কাটে এবং অন্যান্যদের চাইতে বেশি কাটে।
যাইহোক, আমার পরিচিতদের দেখেছি তারা তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সির বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ যেমন- বাইন্যান্স, কুকয়েন ইত্যাদি থেকে উইথড্র দিয়ে কয়েনবেজে রাখতে চাই। আর এই রকমটা করার কারণ তারা ভেবেই নিয়েছে যে, কয়েনবেজ-ই হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ষ্টোর করার মূল জায়গা। যেমনটা আমি আগে ভাবতাম। মূলত কয়েনবেজ সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় এমনটা অনেকেই করে থাকে।
তারা বরং এক রকম বোকামিই করে এমনটা করে। কারণ একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ থেকে আরেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটে ট্রান্সফার করছেন নেহায়েতই ষ্টোর করার জন্য। বোকামি করছে এই কারনে যে, একেতে ট্রান্সফার করে শুধু শুধু ট্রান্সফার ফি নষ্ট করছে।
আর সব চেয়ে বোকামিটা হচ্ছে, যে এক্সচেন্জে বাংলাদেশিদের ট্রেড করার কোন রকমই অনুমতি দেয় না, সেই এক্সচেন্জে ট্রান্সফার করছে। আবার এমনও হচ্ছে আবার যখন ট্রেড করার ইচ্ছে করছে তখন আবার কয়েনবেজ থেকে ট্রান্সফার করে, কোন একটা ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ সাইটে ডিপোজিট করছে। সত্যই বড় ধরনের বোকামি করছি আমরা। শুধু শুধু মাঝ খান থেকে ফি দিয়ে নিজের লোস নিজেই হাতে ধরে করছি।
তাহলে কি কয়েনবেজ ব্যবহার করবো না?
আমি বলছি না যে, আপনি কয়েনবেজ ব্যবহার করবেন না। আমি এইটা বলারও কেউ নই। আমি কয়েনবেজ ব্যবহার করতেই বা কেন নিষেধ করবো? আমার সাথে কয়েনবেজের মারা-মারি, ফাটা-ফাটি তো হয়নি যে, আমি আপনাকে কয়েনবেজ ব্যবহার করতে নিষেধ করবো। আমি শুধু কয়েনবেজ সম্পর্কে আপনাকে ধারনা দেওয়ার জন্য এই আলোচনা করলাম।
আপনার যদি ভুল ধারনা থাকে যে, বিটকয়েন মানেই কয়েনবেজ; বা ক্রিপ্টোকারেন্সি মানেই কয়েনবেজ। তাহলে সেই ধারনাকে পাল্টানোর জন্যই এই টপিক। কয়েনবেজ শুধু মাত্র একটি এক্সচেন্জ বা ওয়ালেট যার নিয়ন্ত্রন পুরোটাই কয়েনবেজের কর্তৃপক্ষের হাতে। যেখানে বাংলাদেশিরা শুধু মাত্র তাদের বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো ষ্টোর করে রাখতে পারবে। কোন রমক এক্সচেন্জ বা ট্রেড করতে পারবেনা।
এখন আপনি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে দেখেন। যেখানে আমি ট্রেড করতে পারবো না, যেখানে ওয়ালেট হিসেবে ব্যবহার করলে তার প্রাইভেট কি -ও আমি পাবো না সেখানে আমার কয়েন শুধু মাত্র ষ্টোর করার প্রয়োজন আছে কি না?
আমার সাজেশন হবে যদি আপনি ট্রেড করার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখেন তবে অবশ্যই ভালমানের অর্থাৎ টপ-রেটেড ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আর যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য হোল্ড করতে চান, তবে যেইসব ওয়ালেট গুলোতে প্রাইভেট কি সহকারে ওয়ালেট তৈরির সুবধা দিয়ে থাকে তা ব্যবহার করতে পারেন। অথবা সর্বউত্তম ৭টি বিটকয়েন ওয়ালেট থেকে আপনি আপনার পছন্দের ওয়ালেট বাছাই করতে পারেন। যদিও সেখানে কয়েনবেজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে আমার সাজেস্ট হবে প্রথম সারির গুলো ব্যবহার করার জন্য। তারপরও আপনারতো একটা নিজের পছন্দ আছেই।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অন্য যেকোন ধরনের আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিপ্টো কমিউনিটিতে যোগ হয়ে থাকতে পারেন: https://t.me/Bangla_Cryptocurrency
সতর্কতাঃ- ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অধিক ভলটালিটির কারনে ট্রেডিং করা অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এই পোষ্টে কাউকে এই মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যদি কেউ ট্রেড করতে চাই, তবে তা সে নিজের দায়িত্বে করবে, এর জন্য এই ব্লগের কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে না।
0 Comments